৫ বৈশাখ, ১৪২৮ মালদহঃ গতবছর বিশ সাল থেকে করোনা বিষে বিশ্ব জর্জরিত৷ কোভিড১৯ এর প্রথম ঢেউ পশ্চিমবঙ্গের খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি করতে না পারলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ে বঙ্গবাসী নাকাল৷ সেকেণ্ড ওয়েভের প্রাক মুহূর্তে মালদহ শহরের ভারত সেবাশ্রম সংঘ থেকে মহারাজের ডাক পেলাম আশ্রমের বাসন্তীপূজায় কবিগান পরিবেশনার জন্য৷ এতদূরে একটা ভালো অনুষ্ঠানের কারণেই অতিমারির মধ্যেও সম্মত হলাম৷ বাঁকুড়া জেলায় আমাদের বাসস্থান থেকে মালদা শহর যাতায়াত সহ প্রায় ছয় শত কি.মি. রাস্তা৷ সুতরাং বাংলা নববর্ষের শুরুতে প্রখর নিদাঘে আতপতাড়িত না হয়ে ৪ বৈশাখ রাত দশটায় নৈশাহারান্তে যাত্রা শুরু করলাম৷ রাণীগঞ্জ, দুবরাজপুর, সিউড়ি, রামপুরহাট প্রভৃৃৃৃৃৃৃৃতি বড় শহরগুলি একে একে পেরিয়ে মোরগ্রামে এসে একটা হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম৷ চা-বিস্কুট খেয়ে পুণরায় গাড়ি স্টার্ট দিলাম এবং জঙ্গীপুর পেরিয়ে যখন গঙ্গানদীর উপর ফারাক্কা সেতুতে পৌঁছলাম তখন নিশি অবসানের পর চারিদিক ফর্সা হল৷ অবশেষে রাস্তার দুইধারে আম্রকাননগুলি পেরিয়ে সকাল ছয় টায় মালদা শহরের সাহাপুরে ভারত সেবাশ্রম সংঘের অফিসে ঢুকলাম৷ আশ্রমের অতিথিশালায় কবিগানের শিল্পীদের বিশ্রামের জায়গা হল এবং হস্তপদ প্রক্ষালনপূর্বক শীঘ্রই ক্লান্ত অবসন্ন দেহগুলি সকলেই আরামপ্রদ বিছানায় এলিয়ে দিলেন৷ বেলা বারোটায় ঘুম থেকে উঠে মধ্যাহ্নভোজনের পর আবার ঘুম দিলাম৷ অবশেষে বিকেলে ফ্রেশ হয়ে চা পান করে আশ্রমের মন্দির, বাগান, মঞ্চ প্রভৃৃৃৃৃৃৃতি ঘুরে দেখলাম৷
অতঃপর বাসায় এসে টিফিন করে অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত হলাম৷ ধুতি-পাঞ্জাবী পরে গলায় উত্তরীয় নিয়ে দুই কবিয়াল, ঢোল কাঁধে দুই ঢোলবাদক ও সঙ্গে দুই দোহার যখন আসর অলংকৃৃৃৃৃৃৃৃত করে বসলেন শ্রোতৃৃৃৃৃৃৃবর্গ তখন উৎসুক চিত্তে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন বাংলার এই শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যপূর্ণ লোকগানের জন্য৷ আমাদের জন্য একঘণ্টা সময় বরাদ্ধ ছিল৷ এদিকে কোভিডের ভয় এড়িয়েও অনেক ভক্ত সমাগম হয়েছিল৷ সকলের বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল ও স্যানিটাইজারের আয়োজনও ছিল৷ কিন্তু মুখে মাস্ক ছাড়া কারও প্রবেশের অনুমতি ছিল না৷ যাইহোক, অনুষ্ঠান শেষে শ্রোতৃৃৃৃৃমণ্ডলী করতালিতে অভিনন্দিত করলেন এবং সর্বজন প্রশংসিত হয়ে পোশাক গুছিয়ে নৈশাহারের জন্য প্রস্তুত হলাম৷ অবশেষে ব্যাগপত্তর গাড়িতে তুলে রাত্রি সাড়ে দশটায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম এবং পরদিন সকালে অবসন্ন দেহে বাড়ি ফিরলাম৷
