KABIGAAN ON MANASA PUJA
MANASA, The Goddess of Snake..
কবিগানের আসর মনসাপূজায়..
“উরগ মনসামাতা
ত্রৈলোক্যের ধাত্রীমাতা
যোগজপ্যা হরের নন্দিনী৷
উৎপত্তি পাতালপুরী
বিশ্বমাতা বিষহরি
চারুকান্তি নির্ম্মলধারিনী৷৷”
কবিয়াল গণেশ ভট্টাচার্য
ঢোলের তালে কোমর দুলিয়ে ত্রিপদী পয়ার ছন্দে দেবী মনসার বন্দনায় জমে উঠে গ্রামগঞ্জের কবিগানের আসর৷ শ্রাবণ ও ভাদ্রমাসের সংক্রান্তিতে বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে পদ্মকুমারী মনসার পূজা ও উৎসব সাড়ম্বরে পালিত হয়৷ জ্যৈষ্ঠ মাসে দশহরা থেকে শুরু হয়ে আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি অর্থাৎ ডাক সংক্রান্তি পর্যন্ত বাংলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বিভিন্ন স্থানে নাগমাতার পূজা অনুষ্ঠিত হয়৷ শুধুমাত্র সংক্রান্তি নয়, তিথি ও বারানুযায়ী শনি ও মঙ্গলবার ধরেও বঙ্গের নানা স্থানে নানা নামে দেবী পূজিতা হন৷ কোথাও ভক্তগণের মানসে তিনি মনসা, কোথাও জগৎগৌরী, কোথাও পদ্মা ও পদ্মকুমারী, কোন স্থানে কেতকা, বিষ হরেন বলে বিষহরি, পাতালে জন্ম তাই পাতালকুমারী প্রভৃৃৃৃৃৃৃৃৃতি বিভিন্ন নামে ও রূপে তিনি বিরাজিতা৷
আজ শ্রাবণ সংক্রান্তিতে নাগেশ্বরীর পূজা ও উৎসব৷ সর্পদংশন বিষভয় নিবারনার্থে ভক্তিভরে আজ আমরা মাতৃৃৃৃৃৃৃৃ আরাধনায় মত্ত থাকি এবং আগামীকালও দুপুরে মায়ের নবমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে৷ দেবীর পূজার রাত্রে অনুষ্ঠান আয়োজনে সকলেই সম্বভপর হয় না, তাই পূজার পরের দিন অর্থাৎ নবমী পূজান্তে বলিদান শেষে সকাল সকাল কবিগানের আসর পেতে দেওয়া হয়৷ আমাদের পিতা-পিতামহের আমলেই সারা দিনরাত ব্যাপী কবিগানের লড়াই চলার নজির আছে৷ কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল ইণ্ডিয়ায় সমাজের ধরণধারণ পাল্টেছে৷ কর্মব্যস্ত মানুষের সময়াভাব ও ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে, অতএব স্বল্পসময়ে শ্রোতাদর্শকরা আসল তত্ত্ব ও তথ্যটুকু চায়৷ শৈশবেই দেখেছি সূর্যাস্তের পর আকন্ঠ সুরাপানে মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করেই সকলকে কবিগানে ও মনসার জাতগানে মগ্ন হতে৷ সেই সৌহার্দ্যপূর্ণ আনন্দঘন দিনগুলি আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে৷
এরকমই একটি আনন্দময় কবিগানের আসর শিল্পনগরী দুর্গাপুরের পুরষা গ্রাম৷ এখানে কত বছর কবিগানের লড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই৷ শ্রাবণ সংক্রান্তির পরের দুই দিন অর্থাৎ ১ ও ২ ভাদ্র প্রতি বছর কবিগানের জন্য দিন ধার্য৷ অন্ততঃ গত দেড়শত বছরের বেশী সময় ধরে এখানে কবিগানের লড়াই চলছে৷ আমি কবিয়াল গণেশ ভট্টাচার্য এই আসরে একটানা ঊনিশ বছর কবিগান পরিবেশন করেছি এবং জানি না কোন আসরে একটানা এতবছর গান করার রেকর্ড কোন শিল্পীর আছে কিনা৷ এখানে মনসা বনাম চাঁদ সদাগর, মনসা বনাম জরৎকারু, শিব বনাম দুর্গা, কৃৃৃৃৃৃৃৃৃষ্ণ বনাম গান্ধারী বা দুর্যোধন বা শকুনি বা কংস বা বৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃন্দাদুতী বা ভীষ্ম বা বাণরাজা, রাম বনাম রাবণ, লক্ষ্মণ বনাম ইন্দ্রজিৎ, শুরু বনাম শিষ্য, ভক্ত বনাম ভগবান, দেবতা বনাম অসুর, গণেশ বনাম কার্তিক, লক্ষ্মী বনাম সরস্বতী, কর্ম বনাম ভাগ্য, ভাববাদ বনাম বস্তুবাদ, রামকৃৃৃৃৃৃৃৃষ্ণ বনাম বিবেকানন্দ, ধর্ম বনাম অধর্ম, একাল বনাম সেকাল, পৌরাণিক বনাম আধুনিক, ভগবান বনাম বিজ্ঞান, পুরুষ বনাম প্রকৃৃৃৃৃৃৃৃৃতি প্রভৃৃৃৃৃৃৃৃতি কোন বিষয়টিই পরিবেশিত হতে অবশিষ্ট নাই৷ যাইহোক, বঙ্গের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যপূর্ণ লোকগান কবিগানের ধারা নাগমাতার নিমিত্তে আজও বাংলার ঘরে ঘরে চির প্রবহমান৷
