শ্রীকৃৃৃৃষ্ণজন্মাষ্টমীব্রত উপলক্ষ্যে কবিগানের লড়াই..

“হে কৃষ্ণ করুণাসিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপতে
গোপেশ গোপীকাকান্ত রাধাকান্ত নমোহস্তুতে৷৷”
“যখন কৃষ্ণ জন্ম নিলেন দৈবকী উদরে…
মথুরায় দেবগণ পুষ্পবৃষ্টি করে৷৷”…
কবিয়াল গণেশ ভট্টাচার্য
বাঙালীর বারো মাসে তের পার্বণ আর তার মধ্যে বর্ষাকালীন একটি শ্রীকৃৃৃৃষ্ণজন্মাষ্টমী মহোৎসব৷ তিথি অনুসারে সাধারণতঃ শ্রাবণ অথবা ভাদ্র মাসে পঞ্জিকায় এই উৎসবের দিন ধার্য হয়৷ এই উৎসব উপলক্ষ্যে বঙ্গদেশে ভোগ-প্রসাদ বিতরণ, ভূরিভোজ, নরনারায়ণ সেবা ও নানা সাংস্কৃৃৃৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ বিভিন্ন লোক আঙ্গিকের মধ্যে সর্বাধিক চাহিদানুসারে কবিগানের লড়াই অধিকাংশ স্থানেই পরিবেশিত হয়৷ ভগবান শ্রীকৃৃৃৃষ্ণকেন্দ্রিক যে বিষয়গুলি কবিগানের আসরে উপস্থাপিত করা হয় সেগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করা হল—
১) শ্রীকৃৃৃৃষ্ণ বনাম কংস—
কবিগানের আকর্ষণীয় বিষয়টি আসলে মামা বনাম ভাগ্নের লড়াই৷ দেবকীনন্দন শ্রীকৃৃৃৃষ্ণ মামা কংসের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মথুরায় গিয়ে তাকে নিধন করেন৷ দুই কবিয়াল স্ব স্ব যুক্তির মাধ্যমে তুমুল লড়াইয়ের মঞ্চে নিজ পক্ষের শ্রেষ্ঠতা প্রমাণ করেন৷
২) শ্রীকৃৃৃৃষ্ণধন বনাম দুর্যোধন—
কৃৃৃৃষ্ণের ধন ও দুর্যোধনের ধন নিয়ে দুই বৈবাহিক মহোদয়ের লড়াই৷ শ্রীকৃৃৃৃষ্ণের পুত্র শাম্বের সহিত দুর্যোধন দুহিতা লক্ষ্মণা পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হওয়ায় উভয়ে বৈবাহিক মহাশয়৷ এছাড়া কৃৃৃৃষ্ণের সাথে দুর্যোধনের আরও দুটি সম্পর্ক আছে৷ কৌরব প্রতিনিধি দুর্যোধন তার খুড়তুতো ভাইদের (যারা শ্রীকৃৃৃৃষ্ণের পিসতুতো ভাই) বিষয়বঞ্চিত করার জন্যই তুমুল লড়াই৷
৩) শ্রীকৃৃৃৃষ্ণ বনাম গান্ধারী—
পিসি বনাম ভাইপোর লড়াই৷ পঞ্চপাণ্ডবের মাতা কুন্তী যেহেতু শ্রীকৃৃৃৃষ্ণের পিসিমা, কুন্তীর বড় জা হওয়ায় কৌরবজননী গান্ধারীও কৃৃৃৃষ্ণের পিসিমা৷ সমরান্তে কুরুক্ষেত্র রণাঙ্গনে নিশুতি রাত্রে উভয়ের কথোপকথন ও তুমুল লড়াই৷
৪) শ্রীকৃৃৃৃষ্ণ বনাম শকুনি—
কৌরবজননী গান্ধারীর ভ্রাতা ও সুবলপুত্র শকুনির পাশার চালে পাণ্ডবরা সর্বসান্ত হওয়ায় পিসেমশাইয়ের অনুপস্থিতিতে পিসিমা ও তার পুত্রদের ঢাল হিসাবে শ্রীকৃৃৃৃষ্ণের সাথে শকুনির লড়াই৷

৫) শ্রীকৃৃৃষ্ণ বনাম বৃৃৃৃন্দাদুতি—
কংস বধার্থে অক্রুরের রথে যদুপতি শ্রীকৃৃৃৃষ্ণের মথুরাগমনের পর অষ্টসখীর শিরোমণি রাধারাণী একাকিনী৷ ওদিকে বামে কুব্জা লয়ে ব্রজেশ্বর শ্রীকৃৃৃৃষ্ণ মথুরাবাসী৷ প্রেমিকের সংবাদ আনয়ন ও রাধিকাবর্জনের অভিযোগ জ্ঞাতার্থে দুত হিসাবে বৃৃৃৃন্দার মথুরায় আগমন এবং বাঁকাচাঁদের সহিত কথোপকথন৷ এই পালাটি অনেক পুরাতন বিরহ গানে সমৃৃৃৃদ্ধ৷ কীর্তনের “মাথুর” পালাটিই হল কবিগানের “কৃৃৃৃষ্ণ বনাম বৃৃৃৃন্দা৷ সখীসংবাদ-দুতিসংবাদ-অক্রুরসংবাদ প্রভৃৃৃৃতি কবিগানের প্রাচীন অঙ্গের বৈচিত্রে ভরপুর পালাটিকে কেন্দ্র করে জমজমাট লড়াই চলে৷
৬) শ্রীকৃৃৃৃষ্ণ বনাম ভীষ্ম—
মহাভারতকেন্দ্রিক কৌরবসেনাপতি বীরযোদ্ধা ভীষ্ম কুরুক্ষেত্র রণাঙ্গনে শ্রীকৃৃৃষ্ণের সাথে কথোপকথনে লিপ্ত হন৷ অর্জুনের শরে শরশয্যা গ্রহণের পূর্বে কৃৃৃৃষ্ণ রথের চাকা নিক্ষেপ করতে উদ্যত হলে কবিগানের লড়াই বাঁধে৷
৭) শ্রীকৃৃৃৃষ্ণ বনাম বাণরাজা—
দ্বারকানাথ শ্রীকৃৃৃৃষ্ণের পৌত্র অনিরূদ্ধ ও বাণরাজার কন্যা ঊষার প্রণয়ঘটিত লড়াই৷
৮) শ্রীকৃৃৃষ্ণ বনাম নারদ—
গোলকপতি গোবিন্দের সাথে দেবর্ষি নারদের কথোপকথন৷ ঋষি নারদ কলহের প্রতীক৷ বর্তমান সমাজ সংসারেও নারদের অভাব নেই৷ এই নিয়ে কবিগানেও তুমুল কলহে লিপ্ত হন দুই কবিয়াল৷
এছাড়াও কবিগানে শ্রীকৃৃৃৃষ্ণের সাথে আরও অনেক চরিত্রের লড়াই চলে৷
৷৷জয় রাধেকৃৃৃষ্ণ৷৷

শ্রীকৃৃৃৃষ্ণজন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে অণ্ডালের শ্রীরামপুরে কবিগান..
2 comments on “শ্রীকৃৃৃৃষ্ণ বিষয়ক কবিগানের পালা..”
Asis দাস
হরে কৃষ্ণ
গণেশ ভট্টাচার্য
জয় রাধেকৃৃৃৃষ্ণ৷